২০২৫ সালে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নতুন পে‑স্কেলে বড় চমক আসছে?
দেশে সরকারি চাকরি দীর্ঘসময় ধরে ধরা পড়েছে এক নিরাপদ এবং সম্মানজনক পেশা হিসেবে। কিন্তু বর্তমানের মূল্যস্ফীতি, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে দেখা দিয়েছে যে, পুরনো বেতন কাঠামো সরকারি কর্মচারীদের জন্য ঠিকমতো কাজ করছে না। এই প্রেক্ষাপটে জাতীয় পে কমিশন (National Pay Commission) ২০২৫ সালে একটি নতুন পে‑স্কেল (বেতন কাঠামো) প্রণয়নের তথ্য জানিয়েছে, যা সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য এক বড় চমক হতে পারে।
নতুন পে‑স্কেলের প্রেক্ষাপট
নিচের বিষয়গুলো নতুন স্কেলের প্রয়োজনীয়তা ও তা কেন আসছে তার ব্যাখ্যা দেয়ঃ
-
সরকারি চাকরিজীবীদের ভেতরে দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে অভিজ্ঞতা যে, পুরনো বেতন কাঠামো বর্তমান বাজার মূল্য ও জীবনযাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখছে না। বিশেষত নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীরাই এই ফাঁকে পড়ছেন।
-
পে কমিশন ইতিমধ্যেই অনলাইনে দুই হাজারের বেশি সংগঠন থেকে মত সংগ্রহ করেছে আবশ্যক পরিবর্তনের জন্য।
-
সূত্র অনুযায়ী, নতুন পে‑স্কেলে সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন “বর্তমানের তুলনায় দ্বিগুণ” হতে পারে এবং গ্রেডভিত্তিক বৈষম্য কমানো হবে।
কি কি বড় পরিবর্তন আসতে পারে
নিচে সম্ভাব্য বড় পরিবর্তনগুলো তুলে ধরা হলোঃ
-
বেতন বৃদ্ধি – সর্বনিম্ন গ্রেড থেকে সর্বোচ্চ গ্রেডের সবাই নতুন কাঠামোর অধীনে বেতন বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
-
গ্রেড সংখ্যা ও বণ্টন পুনর্বিন্যাস – বর্তমান সময়ের জন্য কার্যকর মনে হচ্ছে গ্রেড সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া এবং গ্রেডভিত্তিক বেতন অনুপাত পরিবর্তন করা।
-
নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীদের প্রতি বিশেষ নজর – বিশেষ করে ১১–২০ গ্রেড বা তার নিচের কর্মচারীদের জন্য বেতন বৃদ্ধি ও ভাতা বাড়ানোর দাবি উঠেছে।
-
ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা বৃদ্ধি – শুধু মূল বেতন নয়, বাড়িভাড়া ভাতা, চিকিৎসা ভাতা, শিক্ষা ভাতা ইত্যাদি সামঞ্জস্যপূর্ণ করার বিষয়ও আলোচনায় রয়েছে।
সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ
সুবিধা:
-
সরকারি চাকরিজীবীরা পাবেন আরো সম্মানজনক বেতন, যা তাদের মানসিকভাবেও প্রেরণা হতে পারে।
-
বাজারমূল্য ও জীবনযাত্রার খরচের সঙ্গে সঙ্গতি বাড়লে কর্মচারীর অবস্থান আরও স্থিতিশীল হবে।
-
কর্মচারি সংগঠনগুলোর দীর্ঘদিনের দাবির প্রতি সরকার সাড়া দেবে বলে মনে করা হচ্ছে।
চ্যালেঞ্জ:
-
অর্থনৈতিক পরিবেশ ও বাজেট সীমাবদ্ধতা নতুন স্কেল বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
-
গ্রেডভিত্তিক বেতন বৈষম্য যদি ঠিকভাবে সমাধান না হয়, তাহলে নিম্ন গ্রেড কর্মচারীদের মধ্যে হতাশা বাড়তে পারে।
-
নতুন স্কেল ঘোষণা হলেও তার বাস্তবায়ন সময়সাপেক্ষ হতে পারে এবং কর্মচারীদের উপকার তখনও সীমিত হতে পারে।
সময়সূচি ও অনুসরণীয় বিষয়
-
পে কমিশনের মতে, ২০২৫ সালের শেষে বা ২০২৬ সালের শুরুতেই নতুন পে‑স্কেল কার্যকর হতে পারে।
-
সরকারি চাকরিজীবীদের উচিত হবে নতুন স্কেলের বিষয়ে খবর রাখাসহ নিজ নিজ সংগঠনগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে বিষয়টি মনিটর করা।
-
কর্মচারীরা সংগঠন বা ইউনিয়নের মাধ্যমে তাদের দাবি ও মতামত পে কমিশনে প্রণীত প্রস্তাবনায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়াস চালাতে পারেন।
উপসংহার
নতুন পে‑স্কেল শুধুই সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়া নয় — এটি একটি সুযোগ সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য যাতে তারা জীবিকার নিরাপত্তা, সম্মান ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এটি এক “বড় চমক” হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। তবে চমকটি সফল হতে হলে শুধু ঘোষণা যথেষ্ট নয়; বাস্তবায়ন ও প্রতিফলন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের, পে কমিশনের ও কর্মচারী সংগঠনগুলোর দায়িত্ব থাকবে এই পরিবর্তনকে কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত করার।
নতুন পে‑স্কেলের সম্ভাব্য রূপরেখা, গ্রেডভিত্তিক বেতন অনুমান ও সংশ্লিষ্ট ভাতা বৃদ্ধির তালিকা দেওয়া হলো — এটি এখনো চূড়ান্ত অনুমোদিত নয়, তবে ২০২৫‑২৬ অর্থবছরের বাজেট ও National Pay Commission‑এর (২০২৫) প্রস্তাবনা থেকে সংগ্রহ করা তথ্য।
সম্ভাব্য রূপরেখা
-
গ্রেড সংখ্যা: বর্তমান ২০ গ্রেডের পরিবর্তে ১২ থেকে ১৫ গ্রেডের কাঠামো তৈরির কথা ভাবা হচ্ছে।
-
সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ বেতনের অনুপাত: সর্বোদাচর গ্রেড ও সর্বনিম্ন গ্রেডের বেতনের অনুপাত প্রায় ৮ : ১ থেকে ১০ : ১ রাখার পরিকল্পনা রয়েছে।
-
প্রস্তাবিত কার্যকর সময়সূচি: আগামী বাজেটে সংশোধনসহ নতুন স্কেল কার্যকর হতে পারে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধে।
গ্রেডভিত্তিক বেতন অনুমান
নিচে একটি অনুমানভিত্তিক তালিকা দেওয়া হলো (মূল বেতন শুধুই অনুমান):
| গ্রেড নম্বর | অনুমানিত মাসিক বেতন (বাংলাদেশি টাকা) | মন্তব্য |
|---|---|---|
| গ্রেড ১ | ≈ ১,৫০,০০০ টাকা | উচ্চ পদ (সচিব/সদৃশ) BSS+1 |
| গ্রেড ২ | ≈ ১,২০,০০০ টাকা | অতিরিক্ত সচিব/সদৃশ |
| গ্রেড ৩ | ≈ ৯০,০০০ টাকা | যুগ্ম সচিব/সদৃশ |
| গ্রেড ৪ | ≈ ৭০,০০০ টাকা | উপসচিব/সদৃশ |
| গ্রেড ৫ | ≈ ৫০,০০০ টাকা | সিনিয়র সহকারী সচিব/সদৃশ |
| গ্রেড ৬ | ≈ ৪০,০০০ টাকা | সহকারী সচিব/সদৃশ |
| … | … | … |
| গ্রেড ১০ | ≈ ৩০,০০০ টাকা | মধ্য পর্যায়ের কর্মকর্তা |
| গ্রেড ১২ | ≈ ২৫,০০০ টাকা | প্রবেশমূলক পদ |
| গ্রেড ১৫ | ≈ ২০,০০০ টাকা | নিম্ন গ্রেড কর্মচারী |
দয়া করে মনে রাখবেন—এই বেতন অনুমান মাত্র। অফিসিয়াল ঘোষণা আগের তুলনায় ভিন্ন হতে পারে।
সংশ্লিষ্ট ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা
নতুন স্কেল প্রস্তাবনায় নিচের মত ভাতা ও সুবিধা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে:
-
শিক্ষা ভাতা: সন্তানের শিক্ষা স্তরের ওপর ভিত্তি করে ভাতা বাড়ানোর দাবি তুলেছে কর্মচারী সংগঠন।
-
বাড়িভাড়া ভাতা (House‑Rent Allowance): রাজধানী ও মহানগর এলাকায় বাড়িভাড়া উচ্চ হওয়ায় সেটি বর্তমান তুলনায় অনেক বেশি করার প্রস্তাব রয়েছে। BSS+1
-
বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট: বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী প্রায় ৫% হলেও নতুন স্কেলে এটি বৃদ্ধি হতে পারে; কর্মচারীরা ১০ %‑এর দাবি তুলেছেন।
-
পেনশন ও গ্র্যাচুইটি বৃদ্ধি: অবসর গ্রহণের পর সুবিধার উন্নয়ন ও পেনশন সমমূল্য করার দাবি রয়েছে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
-
যদিও রূপরেখা প্রস্তুত রয়েছে, চূড়ান্ত অনুমোদন ও গেজেট প্রকাশ এখনও অপেক্ষায়।
-
বাজেট সংক্রান্ত দিক থেকে বড় ব্যয় বাড়বে—প্রস্তাব অনুযায়ী নতুন স্কেলের কারণে প্রতি বছর প্রায় ৭০০ বিলিয়ন টাকা (≈ ৭০ হাজার কোটি টাকা) পর্যন্ত অতিরিক্ত ব্যয় হতে পারে।
-
সশস্ত্র বাহিনী ও বিচার বিভাগ এই নতুন পে‑স্কেলে আলাদা কাঠামো থাকতে পারে। The Business Standard

https://shorturl.fm/5WXxP