ভুলেও এআই চ্যাটবটকে এই ১০ তথ্য দেবেন না
আজকের ডিজিটাল যুগে এআই চ্যাটবট আমাদের কাজ-ব্যবহারকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। তথ্য খোঁজা, লেখালেখি, কোড লেখা বা সাধারণ আলোচনা—সবকিছুর জন্যই এআই এখন সহায়ক। কিন্তু সুবিধার সঙ্গে বিপদও আসে। অনিচ্ছাকৃতভাবে বা অসচেতনতাবশত যে তথ্যগুলো আমরা শেয়ার করি, সেগুলো বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই এখানে আলোচনা করবো, এআই চ্যাটবটকে কখনোই কোন ১০ ধরনের তথ্য দেওয়া উচিত নয় এবং কেন সেগুলো গোপন রাখা জরুরি।
প্রথমত, জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) নম্বর বা জাতীয় আদলীর নম্বর কখনোই শেয়ার করবেন না। এটি আপনার পরিচয়ের মূল প্রমাণ; কেউ যদি এটি পেয়ে যায়, তবে সে সহজেই আপনার নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন জায়গায় প্রতারণা করতে পারে। দ্বিতীয়ত, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সম্পর্কিত তথ্য — অ্যাকাউন্ট নম্বর, মোবাইল ব্যাংকিং আইডি, রাউটিং নম্বর—এসব শেয়ার করলে আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে। তৃতীয়ত, কোনো ধরণের OTP, পিন বা পাসওয়ার্ড — এগুলো চ্যাটবটে দিলে আপনার অ্যাকাউন্ট মুহূর্তে ঝুঁকিতে পড়ে।
চতুর্থত, ডেবিট/ক্রেডিট কার্ডের তথ্য (কার্ড নম্বর, মেয়াদ, CVV) কখনোই অননুমোদিত প্ল্যাটফর্মে দেবেন না। পঞ্চমত, ব্যক্তিগত ঠিকানা — বাড়ির ঠিকানা বা নির্দিষ্ট অবস্থান দিলে ফিজিক্যাল নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে। ষষ্ঠত, পাসপোর্ট নম্বর — আন্তর্জাতিক পরিচয় ও ভিসা সংক্রান্ত তথ্যের অপব্যবহার ঘটতে পারে যদি এটি ফাঁস হয়।
সপ্তমত, অফিস বা প্রতিষ্ঠানের সংবেদনশীল তথ্য — ক্লায়েন্ট লিস্ট, কনফিডেনশিয়াল ডকুমেন্ট, সার্ভার বা নেটওয়ার্ক সংক্রান্ত ডিটেইলস কখনোই জনসম্মুখে শেয়ার করবেন না; এতে আইনগত জটিলতা ও সাইবার সিকিউরিটি ঝুঁকি বাড়ে। অষ্টমত, আপনার মেডিকেল রিপোর্ট বা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ব্যক্তিগত তথ্য — এগুলো লিক হলে বহু সামাজিক ও আর্থিক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। নবমত, ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও — ফেস রিকগনিশন, ডিপফেক বা অনৈতিক কাজে ব্যবহার করা হতে পারে; তাই সংবেদনশীল ছবিও অনিরাপদ প্ল্যাটফর্মে আপলোড করবেন না।
দশম এবং শেষত, পরিবারের সদস্যদের ব্যক্তিগত তথ্য — যেমন তাদের জাতীয় আইডি, জন্মতারিখ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম ইত্যাদি — প্রতারণার সহজ হাতিয়ার হতে পারে। প্রতারকরা এই ধরনের ছোটখাটো তথ্য সংগ্রহ করে ভুয়া পরিচয় তৈরি করে আপনাকে বা আপনার পরিবারের কেউকে টার্গেট করতে পারে।
এইসব তথ্য গোপন রাখার প্রয়োজনীয়তা বোঝার জন্য কয়েকটি কারণ গুরুত্ব দিয়ে মনে রাখুন—প্রথমত, পরিচয় চুরি: আপনার পরিচয় যদি চুরি হয়ে যায়, তা থেকে আর্থিক ও সামাজিক দুই ধরনের ঝুঁকি তৈরি হয়। দ্বিতীয়ত, আর্থিক ক্ষতি: ব্যাঙ্ক বা মোবাইল ফাইনান্সিয়াল অ্যাক্সেস হারালে পুনরুদ্ধার কঠিন হয়ে পড়ে। তৃতীয়ত, মানসিক নিরাপত্তা: ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হলে মানসিক টেনশন ও অপব্যবহার বাড়ে। এছাড়া কোম্পানির গোপন তথ্য ফাঁস হলে কাজের জটিলতা ও আইনগত সমস্যা দেখা দেয়।
নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করতে কয়েকটি সহজ নিয়ম মেনে চলুন—কোনো এআই চ্যাটবটকে কখনো আপনার পাসওয়ার্ড, OTP বা ব্যাংক তথ্য দেবেন না; ব্যক্তিগত বা অফিসের সংবেদনশীল নথি আপলোড করবেন না; অচেনা লিংক থেকে কোনও সার্ভার বা ডাউনলোড মনোযোগ দেবেন না; সর্বদা অফিসিয়াল ও ভেরিফাইড ওয়েবসাইট ও অ্যাপ ব্যবহার করুন; আর সম্ভব হলে টু-ফ্যাক্টর অটেনটিকেশন (2FA) চালু রাখুন।
সংক্ষেপে বলতে গেলে, এআই চ্যাটবট অত্যন্ত শক্তিশালী ও উপকারী, কিন্তু তার সীমা এবং ঝুঁকি বুঝে ব্যবহার করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। আপনার ব্যক্তিগত, আর্থিক ও পরিবারের তথ্যকে সর্বোচ্চ গোপনীয়তায় রাখুন—ভুলেও সেই ১০ ধরনের তথ্য এআই চ্যাটবটকে দেবেন না। নিরাপত্তা অনুসরণ করে প্রযুক্তিকে কাজে লাগালে আমরা সকলে উপকৃত হব।
এআই চ্যাটবটকে কখনোই যে ১০ ধরনের তথ্য দেওয়া উচিত নয় (বিস্তারিত)
১. জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) নম্বর
এটি আপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত ডাটা। আপনার পরিচয় জালিয়াতি, ব্যাংক প্রতারণা বা সিম রেজিস্ট্রেশন–সবই এ দিয়ে করা যায়। তাই কখনোই শেয়ার করবেন না।
২. ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তথ্য
অ্যাকাউন্ট নম্বর, রাউটিং নম্বর, মোবাইল ব্যাংকিং আইডি – এগুলো চ্যাটবটে দিলে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি হতে পারে।
৩. OTP, PIN বা পাসওয়ার্ড
কোনো ব্যাংক, বিকাশ, নগদ, রকেট– কোনোটির OTP/PIN/পাসওয়ার্ড দেওয়া যাবে না।
এগুলো দিলে আপনার একাউন্ট মুহূর্তে হ্যাক হতে পারে।
৪. ডেবিট/ক্রেডিট কার্ডের তথ্য
কার্ড নম্বর, মেয়াদ, CVV— এগুলো শেয়ার করা মানেই সম্পূর্ণ কার্ড নিয়ন্ত্রণ অন্যের হাতে চলে যাওয়া।
৫. ব্যক্তিগত ঠিকানা
আপনার বাড়ির ঠিকানা অনলাইনে দেওয়া নিরাপদ নয়। এতে শারীরিক নিরাপত্তার ঝুঁকি থাকে এবং প্রতারকরা টার্গেট করতে পারে।
৬. পাসপোর্ট নম্বর
এটি খুব সংবেদনশীল আইডেন্টিটি ডাটা। পাসপোর্ট নম্বর ছড়িয়ে পড়লে বিদেশগমন, ভিসা–এ সব ক্ষেত্রে প্রতারণা হতে পারে।
৭. চাকরি বা অফিসের গোপন তথ্য
কোম্পানির সিক্রেট ডকুমেন্ট, ক্লায়েন্ট ডেটা, সার্ভার/IP তথ্য— কোনোভাবেই শেয়ার করা উচিত নয়। এতে আইনি ঝুঁকি থাকে।
৮. মেডিকেল রিপোর্ট বা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ব্যক্তিগত ডাটা
এগুলো ব্যক্তিগত তথ্য হিসেবে গোপন রাখা উচিত। স্বাস্থ্য ডাটা লিক হলে ভবিষ্যতে সমস্যা তৈরি করতে পারে।
৯. ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও
ফেস আইডেন্টিটি, ডিপফেক, প্রতারণা— এসবের ঝুঁকি বেশি। অপরিচিত বা অনিরাপদ চ্যাটবটে ছবি দিলে অপব্যবহার হতে পারে।
১০. পারিবারিক তথ্য
আপনার পরিবারের সদস্য সংখ্যা, তাদের NID, বয়স, স্কুল– এসবও ব্যক্তিগত। প্রতারকরা এগুলো ব্যবহার করে ভুয়া ফোন কল বা পরিচয় নিয়ে প্রতারণা করতে পারে।
